সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শের শাহের শাসন সংস্কার | Sher Shah’s Administrative Reforms

শের শাহের শাসন সংস্কার

পানিপথ (১৫২৬) ও ঘর্ঘরার যুদ্ধে (১৫২৯) বাবর আফগানদের পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করলেও আফগানরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। পূর্ব ভারতের আফগানরা তাদের নতুন নেতা শের খাঁ-র নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এই শের খাঁ-ই বাবর এর উত্তরসূরী হুমায়ূনকে পর্যদুস্ত করে মুঘলদের ভারত ত্যাগে বাধ্য করেছিলেন। দিল্লি আগ্রা দখল করে তিনি নিজেকে 'শাহ' বা শাসক বলে ঘোষণা করেন (১৫৩৯)। সাম্রাজ্য স্থাপনের পাশাপাশি শের শাহ তার পাঁচ বছরের রাজত্বকালে (১৫৩৯-৪৪) দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। ভারতবর্ষে তিনি শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলি এনেছিলেন সেগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল এবং মোঘলরাও তাকে অনুসরণ করেছিল।


শের খাঁ তথা ফরিদের পিতার সসারামের জাগির ছিল। কিন্তু সৎমা ও সৎ ভাইয়ের চক্রান্তে তাকে সসারাম ছাড়তে হয়। তারপর সামান্য চাকরিজীবী হিসেবে দক্ষিণ বিহারের শাসক বিহার খাঁ লোহানীর অধীনে তার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল। পরবর্তীকালে তিনি প্রভুর বিরাগভাজন হয়ে মুঘলদের অধীনেও চাকরি করেছিলেন। তিনি বাবরকে চান্দেরি দুর্গ দখলে বিশেষ সহযোগিতা করেছিলেন এবং তার পুরস্কার স্বরূপ তার পিতার জায়গীর সাসারাম তাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল (১৬২৮)। বিহার খাঁ লোহানির মৃত্যুর পর তার ভাগ্যের দরজা খুলে যায়। তিনি বিহার খাঁ-র স্ত্রী দুদু কর্তৃক তার নাবালক পুত্র এর অভিভাবক নিযুক্ত হন এবং দক্ষিণ বিহারের শাসনভার তার হাতে অর্পিত হয়। দুদুর মৃত্যুর পর তিনি কার্যত বিহারের শাসকে পরিণত হন। এরপর বৈবাহিক সম্পর্কের সূত্র ধরে তিনি চুনার দুর্গের অধিকার লাভ করেন। এরপর থেকে তিনি মোগলদের বিরুদ্ধে নিজেকে নিয়োজিত করেন। চৌসার যুদ্ধ (১৫৩৯) এবং কনৌজের (১৫৪০) যুদ্ধে হুমায়ুনকে পরাজিত করে তিনি আগ্রা ও দিল্লি অধিকার করেন এবং মুঘলদের দেশত্যাগে বাধ্য করেন।


সিংহাসন দখলের পর হুমায়ুন অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা এবং রাজ্যের সীমানা বিস্তারের দিকে নজর দেন। প্রথমে পাঞ্জাবের পার্বত্য গক্কর জাতির বিদ্রোহ দমন করেন। তারপর বঙ্গদেশের শাসক খিজির খানের বিদ্রোহ দমন করেন। এরপর তিনি রাজপুতানার দিকে অগ্রসর হন এবং ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দে মালব দখল করেন। ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুর ভাক্কার ও সেওয়ান দুর্গ অধিকার করেন। তারপর গোয়ালিয়রের দুর্গ এবং চান্দেরি ও রাইসিন দুর্গ দখল করেন। সিন্ধু ও মুলতান অধিকার করার পর তিনি ছলচাতুরি সাহায্যে মারওয়ারের সাথে যুদ্ধ বাধিয়ে তা দখল করেন। ওই বছরই যোধপুর অধিকার করেন। ১৫৪৪ এ মেবারের রাজধানী চিতোরের পতন ঘটে। তার জীবনের শেষ অভিযানটি ছিল কালিঞ্জর দুর্গ অভিযান (১৫৪৪)। এই অভিযান চলাকালেই তিনি গোলার আঘাতে পরলোকগমন করেন।


সাম্রাজ্য বিজেতা শেরশাহর তুলনায় ঐতিহাসিকগণ প্রশাসক শেরশাহকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তার শাসনতান্ত্রিক সংস্কারগুলি তাঁকে কালজয়ী করেছে। কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থায় শের শাহ নিজে হাতে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতেন। তাঁর অধীনে চারজন মন্ত্রী কাজ করতেন – দেওয়ান-ই-উজিরৎ (রাজস্ব ও অর্থ মন্ত্রী), দেওয়ান-ই-আরজ (সামরিক বিষয়ক মন্ত্রী), দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) এবং দেওয়ান-ই-ইনসা (রাজকীয় ইশতেহার তৈরি ও প্রেরণ বিষয়ক মন্ত্রী)। মন্ত্রীরা ছিলেন কেবল সচিব মাত্র, নীতি নির্ধারণ বা মৌলিক পরিবর্তনের কোনো ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়নি।


শেরশাহের শাসন ব্যবস্থার সর্বনিম্ন একক ছিল পরগনা। কতগুলি গ্রাম নিয়ে পরগনা গড়ে উঠত। গ্রামের শাসন ছিল মুকুদ্দম বা গ্রামপ্রধান এবং পাটোয়ারী হাতে। মুকুদ্দম আইন ও শাসন বিভাগ দেখাশোনা করতেন, পাটোয়ারী ছিল হিসাব রক্ষক। এরা সরকারী কর্মচারী ছিলেন না। এরা রাজস্বের একাংশ ভোগের শর্তে নিযুক্ত হতেন। পরগনার প্রধান ছিলেন সিকদার (শাসনতান্ত্রিক) এবং মুন্সিফ বা আমিন (জমি জরিপ ও ভূমি রাজস্ব)। এদেরকে সহযোগিতা করতেন পোদ্দার বা খাজনাদার এবং আমিন। শেরশাহ আমিনদের দু’বছর অন্তর বদলি করতেন কারণ এই পদটি খুব লাভজনক ছিল। পরগনার ওপরে ছিল সিক বা সরকার। সরকারের প্রধান ছিলেন মুক্তা বা ফৌজদার এবং তাকে সাহায্য করতেন প্রধান মুন্সিফ যিনি পরগনার মুন্সিফদের তদারকি করতেন এবং ভূমি রাজস্ব বিষয়ে সম্রাটের কাছে দায়বদ্ধ থাকতেন।


শের শাহের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল ভূমিরাজস্ব সংস্কার। জমি জরিপ করে তার উৎপাদিকা শক্তি অনুযায়ী জমিগুলিকে ভালো, মাঝারি ও খারাপ এই তিন ভাগে ভাগ করা হত। গড় উৎপাদন নির্ণয় করে তার এক-তৃতীয়াংশ রাজস্ব হিসেবে ধার্য করা হত। নগদে অথবা শস্যে রাজস্ব জমা করা যেত। তবে শেরশাহ নগদে নিতেই পছন্দ করতেন। ভবিষ্যতে দুর্ভিক্ষের রক্ষাকবচ গড়ে তোলার জন্য বিঘাপ্রতি ২.৫ শীর অতিরিক্ত আদায় করতেন।


রাষ্ট্র এবং কৃষকদের মধ্যে সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে শেরশাহ পাট্টা ও কুবুলিয়ৎ চালু করেন। পাট্টা হল একটি দলিল যেখানে জমির উপর চাষির অধিকার এবং চাষির কাছে সরকারের প্রাপ্য লিপিবদ্ধ থাকত। চাষী উক্ত শর্ত স্বীকার করে লিখিতভাবে সম্রাটকে যা দিত তা কবুলিয়ৎ। পাট্টা ও কবুলিয়ৎ কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের ক্ষমতাকে পুরোপুরি খর্ব করতে পারেনি।


সামরিক ব্যবস্থায় তিনি আলাউদ্দিনকে অনুসরণ করেছিলেন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে তিনি সৈন্য নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। সামরিক ব্যবস্থায় দুর্নীতি রোধ করার জন্য তিনি ‘দাগ ও হুলিয়া’ ব্যবস্থা চালু করেন। সৈনিকদের দ্বারা কৃষির যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য তিনি সৈনিকদের কড়া নির্দেশ দেন। এমনকি অভিযুক্ত সৈনিকদের শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।


রাস্তাঘাট ও পথিকের নিরাপত্তার ব্যাপারে তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যেত পথে-ঘাটে ডাকাতির সঙ্গে স্থানীয় জমিদাররাই যুক্ত থাকত। এরকম কয়েকজন জমিদারকে দমন করা হয়েছিল, যেমন ফতে খান জাঠ। তিনি জমিদারদের হুকুম দিয়েছিলেন রাস্তাঘাটে চুরি-ডাকাতি হলে তার দায় কেবল জমিদারদেরই নিতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য তিনি চারটি বৃহৎ রাস্তা তৈরি করেন। (I) সোনারগাঁ থেকে সিন্ধু পর্যন্ত সড়ক-ই-আজম (বর্তমানে G.T. রোড), (II) আগ্রা থেকে যোধপুর ও চিতোর, (III) লাহোর থেকে মুলতান এবং (IV) আগ্রা থেকে বুরহানপুর। পথিকদের সুবিধার জন্য রাস্তার ২ ক্রোশ অন্তর সরাইখানা স্থাপন করেন। সরাইখানা গুলিতে বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষদের পৃথক খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম ও উপাসনার ব্যবস্থা করে দেন। এই সরাইখানা গুলি অনেক ক্ষেত্রে ডাক চৌকি হিসেবেও ব্যবহৃত হত। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য এই সরাইখানা গুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠত ছোট শহর (কসবা)।


ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার জন্য তিনি পথঘাট উন্নয়নের পাশাপাশি মুদ্রা ব্যবস্থার সংস্কার করেন। তামা, রূপ ও সোনার মুদ্রার মাপ, ওজন এবং বিশুদ্ধতা স্থির করে দেওয়া হয়। বণিকদের কেবল পণ্য নিয়ে প্রবেশ এবং বিক্রির সময় ছাড়া আর অন্য কোন শুল্ক দিতে হত না।


ঐতিহাসিকদের একাংশ মনে করেন শেরশাহের সংস্কার গুলির দ্বারা আকবর প্রভাবিত হয়েছিলেন। আকবর জমি জরিপ, মুদ্রা ব্যবস্থা, সেনাবাহিনীতে দাগ ও হুলিয়া প্রথা এবং পরগনা ও সরকারের ধারণা শেরশাহের থেকেই নিয়েছিলেন। কিন্তু আকবরের বহু ক্ষেত্রেই নিজস্ব উদ্ভাবন ছিল। যেমন জাবতি ব্যবস্থা, মনসবদারি প্রথা, সুল-ই-কুল প্রভৃতি ছিল তার নিজস্ব উদ্ভাবন। আবার শেরশাহ আলাউদ্দিন খলজি, মহম্মদ বিন তুঘলক ও ফিরোজ শাহ তুঘলকের বহু নীতি অনুসরণ করেছিলেন। সুতরাং বলা যায় প্রজাকল্যাণকামী স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে প্রক্রিয়া আলাউদ্দিন খলজী থেকে শুরু হয়েছিল এবং আকবরে গিয়ে তা পরিণতি পেয়েছিল শেরশাহ ছিলেন সেই পথেরই বলিষ্ঠ প্রতীক।

Sher Shah’s Administrative Reforms

Although Babur defeated the Afghans at the battles of Panipat (1526) and Ghaghra (1529) and laid the foundation of the Mughal Empire, the Afghans were not annihilated. The Afghans of eastern India rallied under their new leader, Sher Khan, who decisively defeated Babur’s successor Humayun and compelled the Mughals to leave India. After capturing Delhi and Agra, he proclaimed himself Shah (sovereign) in 1539. In addition to consolidating his empire, Sher Shah, during his five-year reign (1539–1544), made significant contributions toward peace, order, and good governance. His administrative reforms had long-lasting effects, which even the Mughals later adopted.

Early Career of Sher Shah

Sher Khan, later known as Sher Shah, was originally the son of Hasan, a jagirdar of Sasaram. Due to the intrigues of his stepmother and half-brothers, he had to leave his native estate. His career began humbly in the service of Bahar Khan Lohani, ruler of South Bihar. Later, falling out of favor with his master, he briefly served under the Mughals, where he assisted Babur in the capture of the fort of Chanderi, for which his father’s jagir of Sasaram was restored to him (1528). Upon Bahar Khan Lohani’s death, Sher Shah was appointed guardian of his minor son by Bahar Khan’s widow, Dudu, and became the de facto ruler of South Bihar. After Dudu’s death, he consolidated his authority and, through marital alliances, gained control of the fort of Chunar. Turning against the Mughals, he defeated Humayun at Chausa (1539) and Kannauj (1540), seized Delhi and Agra, and forced Humayun into exile.

Expansion of Empire

After securing the throne, Sher Shah focused both on maintaining internal order and expanding his dominions. He subdued the rebellious Gakkhar tribes of Punjab, defeated Khizr Khan of Bengal, and advanced into Rajputana. In 1542, he annexed Malwa, followed by forts in Sindh (Bhakkar and Siwan), Gwalior, Chanderi, and Raisin. He captured Sindh and Multan and tricked the rulers of Marwar into conflict, gaining Jodhpur in 1543. In 1544, Chitor fell to his armies. His last campaign was against Kalinjar, where he died from an accidental explosion of gunpowder.

Administrative Reforms

Historians emphasize Sher Shah’s role as an administrator rather than merely as a conqueror. His reforms were foundational and enduring:

1. Central Administration
Sher Shah concentrated authority in his own hands, assisted by four principal ministers:

  • Diwan-i-Wizarat (finance and revenue),

  • Diwan-i-Arz (military affairs),

  • Diwan-i-Riyasat (foreign affairs), and

  • Diwan-i-Insha (royal correspondence and edicts).
    These officials were essentially secretaries without independent policymaking powers.

2. Local Administration
The lowest administrative unit was the pargana, consisting of several villages. Each village was overseen by the mukaddam (headman, responsible for order) and the patwari (accountant). These were not salaried officials but enjoyed a share of revenue instead of wages. The pargana was administered by the shiqdar (law and order) and the munsif or amin (land survey and revenue assessment), assisted by the poddar (treasurer). To prevent corruption, amins were rotated every two years. Above the pargana was the sarkar, headed by the muktar or faujdar, assisted by a chief munsif.

3. Revenue Reforms
Sher Shah’s greatest contribution lay in his revenue system. Land was surveyed and classified as good, medium, or poor according to fertility. The average produce was calculated, and one-third was fixed as state revenue. Revenue could be paid in cash or kind, though cash was preferred. An additional levy of 2.5 seers per bigha was imposed to build reserves against famine.

To establish a direct relationship between the state and cultivators, Sher Shah introduced patta and qabuliat. The patta was a document recording the cultivator’s rights and the dues owed to the state, while the qabuliat was a written acceptance by the cultivator. Although designed to weaken intermediaries, these measures did not fully eliminate them.

4. Military Reforms
Following Alauddin Khalji’s model, Sher Shah recruited soldiers based on merit rather than ethnicity. To prevent corruption, he instituted the dagh (branding of horses) and huliya (descriptive rolls of soldiers). Strict measures were enforced to ensure that soldiers did not harm cultivators; guilty soldiers were punished, and compensation was paid to victims.

5. Public Works and Trade
Sher Shah took strong measures to secure roads and travelers. Recognizing the complicity of zamindars in highway robbery, he held them directly responsible. Notorious offenders, such as Fateh Khan Jat, were suppressed. He constructed four major highways:

  1. Sonargaon to the Indus (Grand Trunk Road),

  2. Agra to Jodhpur and Chitor,

  3. Lahore to Multan,

  4. Agra to Burhanpur.
    Sarais (rest-houses) were built at regular intervals (about two kos), providing facilities for food, lodging, and worship, with separate arrangements for different communities. Many sarais also served as postal stations, around which qasbas (small towns) developed.

6. Monetary and Commercial Reforms
To facilitate trade, Sher Shah standardized coinage in copper, silver, and gold with fixed weight and purity. Merchants were required to pay duties only at entry and sale points, eliminating multiple internal tolls.

Legacy

Many historians believe that Akbar was influenced by Sher Shah’s reforms, particularly in land revenue, coinage, the branding of horses and soldiers, and the administrative units of pargana and sarkar. However, Akbar also introduced his own innovations, such as the zabt system, mansabdari organization, and the policy of sulh-i kul. Likewise, Sher Shah himself had drawn inspiration from earlier rulers such as Alauddin Khalji, Muhammad bin Tughlaq, and Firuz Shah Tughlaq. Thus, Sher Shah may be regarded as a powerful symbol in the historical process of benevolent despotism, a tradition that began with Alauddin and culminated under Akbar.

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...